সারা দেশে এখন সাড়ে তিন হাজার পোশাক কারখানা আছে। এই পোশাকশিল্প থেকেই দেশের সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি আয় হয়। আন্তর্জাতিক ব্যবসা করা এ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য আছে চাকরির ভালো সুযোগ। বেতনও আকর্ষণীয়। যোগ্য হয়ে আপনিও নিতে পারেন এই সুযোগ।
‘গার্মেন্টসে কাজ করব’—এ নেতিবাচক মনমানসিকতার জন্য উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা এ শিল্পে কাজ করতে আসতে চান না। সে জন্য মোটামুটি মানের লোকজনকে তাঁদের গড়েপিটে নিতে হয়। তবে এখানে কাজের অনেক সুযোগ আছে। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ আছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে করপোরেট কালচারও চালু হয়ে গেছে। ব্যবসায় বাড়াতে যে ভালো ভূমিকা রাখছে, সেই তরতরিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে। কথাগুলো বলছিলেন নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
আর তথ্য বলছে, দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় জবপোর্টালে গত সপ্তাহে ২৬ ক্যাটাগরির মধ্যে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইলে তৃতীয় সর্বোচ্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছিল। পদের সংখ্যা সাড়ে তিন শ। দেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক ব্যবসা পোশাকশিল্পের চাকরির বাজারের এটি একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। শিল্পের উদ্যোক্তাদের মতে, পোশাক খাতে চাকরির অনেক সুযোগ আছে। বরং সেই অনুপাতে দক্ষ জনবল পাওয়া যাচ্ছে না।
সারা দেশে বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার পোশাক কারখানা আছে। এর মধ্যে সরাসরি রপ্তানি করে প্রায় দুই হাজারের বেশি কারখানা। এসব কারখানা থেকে গত অর্থবছর দুই হাজার ৪৪৯ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় এ অর্থ এক লাখ ৯৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকার সমান, যা দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ শিল্প খাতে যেমন অশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত প্রায় ৪০-৪২ লাখ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা কাজ করছেন। পাচ্ছেন মোটা অঙ্কের বেতন। আছে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও।
তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পোশাকশিল্প দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। তবে কর্মপরিবেশের উন্নতিসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ায় খাতটি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এদিকে ২০২১ সালে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলারে (প্রায় চার লাখ কোটি টাকা) নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিজিএমইএ। তার মানে আগামী দিনগুলোতে এ শিল্পে বড় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, আগে একসময় শুধুই পোশাক কারখানা ছিল। একজন ব্যবস্থাপক, আর কয়েকজন লাইনম্যান হলেই কাজ হয়ে যেত। তবে সময় বদলে গেছে, এখন এটি শিল্প। আন্তর্জাতিক ব্যবসা। ফলে অনেক ধরনের পেশাদার লোক দরকার।
শিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তৈরি পোশাক কারখানার ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে উৎপাদন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, মানবসম্পদ, কর্মপরিবেশ (কমপ্লায়েন্স), হিসাবরক্ষণ, বিপণন ফ্যাশন ডিজাইনার, বস্ত্র প্রকৌশলী, পণ্যের মানোন্নয়ন, পণ্যের নমুনা প্রস্তুত, প্রশাসন ইত্যাদি বিভাগে কাজ করার সুযোগ আছে। এসব পদে মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও অনেকেই যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে কয়েক বছরের মধ্যে এটাকে লাখে নিয়ে যেতে পারেন।
এমনই এক গল্প শোনালেন নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি জানান, তাঁর কারখানার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি মাসিক এক লাখ টাকা বেতন পান। যদিও তিনি ডিগ্রি পাস। কারখানায় যোগ দিয়েছিলেন একজন কমার্শিয়াল কর্মকর্তা হিসেবে।
এ শিল্পে কাজ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের অবশ্যই ইংরেজি ভাষাটা ভালো বলতে ও লিখতে পারতে হবে। সেই সঙ্গে যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর পড়াশোনা থাকে, তবে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। আর সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটে পোশাকশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোর্স করতে পারলে খুবই ভালো। এমন কর্মীদের পছন্দ করেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারা।

Collected