তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে একটু সামনের দিকে গেলেই ছায়া সুনীবিড় ক্যাম্পাস।  বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষেপে বুটেক্স।বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্পের ভিত গড়ে তোলার লড়াইয়ে নিয়োজিত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ।  এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারেরও বেশি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা এই প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের স্নাতক সম্পন্ন করে দেশ-বিদেশে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।আবার অনেকেই প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজস্ব পোষাক কারখানা। কেউ কেউ ব্যস্ত বিভিন্ন গবেষণা নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস তুলে আনতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯২১ সালে।সেই সময়ে ‘উয়েভিং স্কুল’ নামে নারিন্দায় এই প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়েছিল।দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালে এর নামকরণ করা হয়, ‘ইস্ট পাকিস্তান টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট’৷১৯৬০ সালে বর্তমান স্থানে ক্যাম্পাসটি স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৮ সালে এর নামকরণ করা হয় কলেজ অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি।তখন থেকেই এখানে চার বছর মেয়াদী বিএসসি কোর্স চালু করা হয়।পরবর্তীতে ২০১০ সালে টেক্সটাইল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার প্রস্তাব করা হলে বিলটি জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় বিল’ টি চূড়ান্তভাবে পাস হয়।২২ ডিসেম্বর, ২০১০ থেকে বিলটি কার্যকর হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ১৫ মার্চ ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়’এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রতি বছর ২২ ডিসেম্বর দি
চলমান টেক্সটাইল শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে পূর্বোক্ত চারটি বিষয়ের সাথে আরো নতুন চারটি বিষয়ের উপর স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও এমএসসি,এমবিএ ও পিএইচডি কোর্সও চালু করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
নটিকে এখানকার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে অত্যন্ত আড়ম্বরের সাথে পালন করে থাকে।

বর্তমানে ক্যাম্পাসটিতে স্নাতক পর্যায়ে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যনরত আছে।শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুবিধার্থে রয়েছে উচ্চমানের বিভিন্ন ল্যাবরেটরি।শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে নিয়োজিত আছেন মেধাবী ও পরিশ্রমী একদল শিক্ষক।
বর্তমানে যে সকল বিষয়ের উপর স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে সেগুলো হলঃ
১। ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং
২।ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং
৩।ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং
৪। এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং
৫। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট
৬। টেক্সটাইল ফ্যাশন ডিজাইন
৭।ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং
৮। টেক্সটাইল মেশিন ডিজাইন এন্ড মেইন্টেন্যান্স।
শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য তিনটি আবাসিক হল রয়েছে ৷ ছেলেদের জন্য রয়েছে দুটি হল এবং মেয়েদের জন্য একটি হল। ছেলেদের জন্য রয়েছে শহীদ আজিজ হল এবং জি,এম,এ,জি ওসমানী হল আর মেয়েদের জন্য রয়েছে শেখ হাসিনা হল৷
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু বিশ্ববিদায়লয়ের পড়াশনাতেই নিজেদের গন্ডিবদ্ধ করে রাখেনি।প্রতি বছর এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতায় কৃতিত্বের সাথে অংশগ্রহন করে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।এছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব আর সাংস্কৃতিক সঙ্গঠনগুলো নিয়মিত ভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে।এর মধ্যে বাউলিয়ানা ও একাত্তর কালচারাল ক্লাবের নাম বিশেষভাবে বলতে হয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়তে এসেছেন এই প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির লেভেল ৩ টার্ম ২ এর ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রথম স্থান অধিকারী তনিমা ইসলাম তন্বী বলেন, মূলত নিজে কিছু করবো এমন চিন্তা থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসা।পরবর্তীতে দেশের সবচেয়ে ভাল সেক্টর আর নিজের স্কিল প্রকাশ করার সুযোগ বেশি । এই চিন্তা থেকেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসা।আর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্যে বুটেক্সের চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে?
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্জ পদ অলংকৃত করে আছেন প্রফেসর মাস-উদ আহমেদ।
দেশের সার্বিক উন্নতিতে বেশুমার অবদান রাখলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।ক্লাস রুম আর আবাসন সংকট চরমে।তারপরও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সাথে নিয়েও নীরবে দেশের অর্থনীতি তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

-- আহমদ সাকিব সিনা / মুহাইমিনুল অভি